ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় পাঠক রফি হকের বক্তব্য, ‘‘শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের ভোটে নির্বাচিত না৷ তাই তাঁর বক্তব্য বা চিঠি বাংলাদেশের জনগণের মতামত না৷ শেখ হাসিনার জন্য সবচেয়ে ভালো হয়, এই ধরনের স্পর্শকাতর আন্তর্জাতিক বিষয়ে চুপ থাকা৷ তারপরও যদি বলতে হয়, তাহলে তাঁর গণভোট অথবা জনমত জরিপের মাধ্যমে জনগণের মতামত যাচাই করে বলা উচিত৷ এটা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নয়, এটা কাশ্মীরের জনগণের স্বাধীনতা সংগ্রাম৷''
পাঠক নাহিদ হোসেনও রফিক হকের সঙ্গে পুরোপুরি একমত৷ আর পাঠক জাহেদ আহমেদের প্রশ্ন, ‘‘ভোটারবিহীন নির্বাচিত সরকার কীভাবে জনগণের মতামত ছাড়া এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়?''
‘‘ভারত কখনও আমাদের ভালো চায়নি৷ আশা করছি বাংলাদেশের জনগণ চিন্তা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে৷'' এ মন্তব্য ডয়চে ভেলের পাঠক সালাউদ্দিন মন্সির৷
মনির খানেরও এক কথা৷ তিনি ভারতে পাশে নেই বলে জানিয়েছেন৷
শাহবাজ চৌধুরীর প্রশ্ন, ‘‘বাংলাদেশ বলতে কী বোঝায়? আওয়ামী লীগ সরকার নাকি জনগণ?''
মো. মনিরের ধারণা, ‘‘এটা আওয়ামী লীগের কথা, জনগণের মতামত না৷''
-
কাশ্মীরে বহুদিনের সংঘাত, বহুদিনের ক্ষত
১৯৪৭
বলা হয় দেশবিভাগের পর পাকিস্তান থেকে আগত উপজাতিক যোদ্ধারা কাশ্মীর আক্রমণ করে৷ তখন কাশ্মীরের মহারাজা ভারতের সাথে সংযোজনের চুক্তি করেন, যা থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়৷
-
কাশ্মীরে বহুদিনের সংঘাত, বহুদিনের ক্ষত
১৯৪৮
ভারত জাতিসংঘে কাশ্মীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করলে পর, ৪৭ ক্রমিক সংখ্যক প্রস্তাবটি গৃহীত হয়৷ ঐ প্রস্তাব অনুযায়ী গোটা কাশ্মীরে গণভোট অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে৷
-
কাশ্মীরে বহুদিনের সংঘাত, বহুদিনের ক্ষত
১৯৪৮
কিন্তু পাকিস্তান প্রস্তাব অনুযায়ী, কাশ্মীর থেকে সৈন্যাপসারণ করতে অস্বীকার করে৷ অতঃপর কাশ্মীরকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়৷
-
কাশ্মীরে বহুদিনের সংঘাত, বহুদিনের ক্ষত
১৯৫১
ভারতীয় কাশ্মীরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ও ভারতের সঙ্গে সংযোজনকে সমর্থন করা হয়৷ অতঃপর ভারত বলে, আর গণভোট অনুষ্ঠানের কোনো প্রয়োজন নেই৷ জাতিসংঘ ও পাকিস্তানের মতে, গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়া আবশ্যক৷
-
কাশ্মীরে বহুদিনের সংঘাত, বহুদিনের ক্ষত
১৯৫৩
কাশ্মীরের ‘প্রধানমন্ত্রী’ শেখ আব্দুল্লাহ গণভোটের সমর্থক ছিলেন ও ভারতের সঙ্গে সংযোজনকে বিলম্বিত করার চেষ্টা করেন৷ ফলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ জম্মু-কাশ্মীরের নতুন সরকার ভারতের সঙ্গে কাশ্মীরের সংযোজনকে পাকা করেন৷
-
কাশ্মীরে বহুদিনের সংঘাত, বহুদিনের ক্ষত
১৯৬২-৬৩
১৯৬২ সালের যুদ্ধে চীন আকসাই দখল করে৷ তার আগের বছর পাকিস্তান কাশ্মীরের ট্রান্স কারাকোরাম ট্র্যাক্ট এলাকাটি চীনকে প্রদান করে৷
-
কাশ্মীরে বহুদিনের সংঘাত, বহুদিনের ক্ষত
১৯৬৫
কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে আবার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়৷ কিন্তু যুদ্ধশেষে উভয় দেশের সেনা তাদের পুরোনো অবস্থানে ফিরে যায়৷
-
কাশ্মীরে বহুদিনের সংঘাত, বহুদিনের ক্ষত
১৯৭১-৭২
আবার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ৷ যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয়ের পর সিমলা চুক্তি সম্পাদিত হয় ১৯৭২ সালে৷ যুদ্ধবিরতি রেখাকে লাইন অফ কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রণ রেখায় পরিণত করা হয় ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিবাদ সমাধান সম্পর্কে ঐকমত্য অর্জিত হয়৷
-
কাশ্মীরে বহুদিনের সংঘাত, বহুদিনের ক্ষত
১৯৮৪
ভারত সিয়াচেন হিমবাহ নিজ নিয়ন্ত্রণে আনার পর পাকিস্তান তা একাধিকবার দখল করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু সফল হতে পারেনি৷
-
কাশ্মীরে বহুদিনের সংঘাত, বহুদিনের ক্ষত
১৯৮৭
জম্মু-কাশ্মীরে বিতর্কিত নির্বাচনের পর রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়৷ ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে উগ্রপন্থাকে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ করে, কিন্তু পাকিস্তান সে দোষারোপ চিরকাল অস্বীকার করে এসেছে৷
-
কাশ্মীরে বহুদিনের সংঘাত, বহুদিনের ক্ষত
১৯৯০
গওকাদল সেতুর কাছে ভারতীয় সিআরপি রক্ষীবাহিনী কাশ্মীরি বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালালে পর শতাধিক আন্দোলনকারী নিহত হন৷ প্রায় সমস্ত হিন্দু কাশ্মীর উপত্যকা ছেড়ে চলে যান৷ জম্মু-কাশ্মীরে সেনাবাহিনীকে আফসা বা আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়৷
-
কাশ্মীরে বহুদিনের সংঘাত, বহুদিনের ক্ষত
১৯৯৯
কাশ্মীর ভ্যালিতে গোটা নব্বই-এর দশক ধরে অশান্তি চলে৷ ১৯৯৯ সালে আবার ভারত-পাকিস্তানের লড়াই হয়, এবার কারগিলে৷
-
কাশ্মীরে বহুদিনের সংঘাত, বহুদিনের ক্ষত
২০০১-২০০৮
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আলাপ-আলোচনার যাবতীয় প্রচেষ্টা প্রথমে নতুন দিল্লির সংসদ ভবন ও পরে মুম্বই হামলার ফলে ব্যর্থ হয়৷
-
কাশ্মীরে বহুদিনের সংঘাত, বহুদিনের ক্ষত
২০১০
ভারতীয় সেনার গুলি লেগে এক বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর পর কাশ্মীর ভ্যালি উত্তেজনায় ফেটে পড়ে৷ বিক্ষোভ চলে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে, প্রাণ হারান অন্তত ১০০ জন৷
-
কাশ্মীরে বহুদিনের সংঘাত, বহুদিনের ক্ষত
২০১৩
সংসদ ভবনের উপর হামলার মুখ্য অপরাধী আফজল গুরুকে ফাঁসি দেওয়া হয়৷ এর পর যে বিক্ষোভ চলে, তা-তে দু’জন প্রাণ হারায়৷ এই বছরই ভারত আর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীদ্বয় মিলিত হয়ে উত্তেজনা উপশমের কথা বলেন৷
-
কাশ্মীরে বহুদিনের সংঘাত, বহুদিনের ক্ষত
২০১৪
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ উপস্থিত থাকেন৷ কিন্তু এর পর নতুন দিল্লিতে পাকিস্তানি হাই কমিশনার কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে মিলিত হওয়ায় ভারত আলাপ-আলোচনা স্থগিত রাখে৷
-
কাশ্মীরে বহুদিনের সংঘাত, বহুদিনের ক্ষত
২০১৬
আজাদ কাশ্মীর ভিত্তিক হিজবুল মুজাহিদীন-এর অধিনায়ক বুরহান ওয়ানি-র মৃত্যুর পর কাশ্মীরে স্বাধীনতা সমর্থকরা আবার পথে নেমেছেন৷ এই আন্দোলনে এ পর্যন্ত অন্তত ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে ও বিক্ষোভ অব্যাহত আছে৷
-
কাশ্মীরে বহুদিনের সংঘাত, বহুদিনের ক্ষত
২০১৯
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামা সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ)-এর গাড়িবহরে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে৷ এতে ৪২ জওয়ান নিহত হন৷ বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন জৈশ-ই-মোহাম্মদ হামলার দায় স্বীকার করেছে৷ এরপর ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সীমান্তের ভেতরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালায় ভারতীয় বিমান বাহিনী৷
-
কাশ্মীরে বহুদিনের সংঘাত, বহুদিনের ক্ষত
২০১৯
ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নং ধারা অনুযায়ী, জম্মু ও কাশ্মীরের কাছে কিছু বিশেষ অধিকার ছিল। ৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৩৭০ ধারাটি অবসানের দাবি তোলেন৷ বিল পাস হয়। একই দিনে তাতে সই করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ৷ ফলে, কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা' বাতিল হয়। তাছাড়া মোদী সরকারের সিদ্ধান্তের ফলে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের মর্যাদা হারায়। জম্মু ও কাশ্মীর ও লাদাখ নামে দুইটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠিত হয়।
লেখক: অশোক কুমার/এসি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐ কথার সঙ্গে বাংলাদেশের মাত্র ২০ ভাগ মানুষের সমর্থন থাকতে পারে ধারণা করছেন সাইফুল আমিনের৷
তবে সিদ্ধার্থ সিধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে একমত৷ ডিডাব্লিউ-র ফেসবুক পাতায় তিনি লিখেছেন, ‘‘সঠিক সিদ্ধান্ত৷ একাত্তরে ভারত যেমন আমাদের পাশে ছিল, তেমনি ভারতের বিপদে বাংলাদেশও পাশে থাকবে৷''
প্রায় একই বক্তব্য তুলে ধরেছেন ফেসবুকে পাঠক বাপ্পা ঘোষও৷ তিনি বাকিদের প্রশ্ন করেছেন, ‘‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস কি পড়া নেই?''
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ